রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশে আলুবাহী ট্রাকের স্লট বুকিং বন্ধ করে দেওয়ার কারণে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানিতে সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে দুই-এক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে আলু আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আলুর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত
ভারতের হিলি স্থলবন্দরের রপ্তানিকারক পাপ্পু আগরওয়াল এবং বাবই দে জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার অভিযোগ তুলেছে, তাদের রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য এবং বাংলাদেশে অতিরিক্ত পরিমাণে আলু রপ্তানি করার কারণে স্থানীয় বাজারে আলুর দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অভিযোগে গত ২১ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরপর গত ২২ নভেম্বর টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন রাজ্য ও বাংলাদেশে আলু রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
স্লট বুকিং বন্ধ
হিলি স্থলবন্দরের রপ্তানিকারকরা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন দপ্তর থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির জন্য ট্রাকের স্লট বুকিং করতে হয়। রবিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকে অনলাইনে স্লট বুকিং বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে আমদানি কার্যক্রম থমকে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের আমদানিকারকদের উদ্বেগ
হিলি বন্দরের আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন যে, স্লট বুকিং বন্ধ থাকায় আগামীকাল সোমবার অথবা মঙ্গলবার থেকে আলু আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।” তবে আজ রোববার পর্যন্ত পূর্বের এলসির ভিত্তিতে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল আলম জানান, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি শুরু হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
রোববার বিকেল পর্যন্ত হিলি বন্দরে প্রায় ৪০টি আলুবাহী ট্রাকে ১ হাজার মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। তবে আমদানি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় হিলি বন্দরের খুচরা বাজারে আলুর দাম ইতোমধ্যেই কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৬২-৬৫ টাকায় পৌঁছেছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতির আশঙ্কা
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। বাংলাদেশের বাজারে আলুর সরবরাহ কমে গেলে দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরাও রপ্তানি বন্ধের কারণে লোকসানের মুখে পড়বেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সরকার এই সংকট নিরসনে বিকল্প বন্দর ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুই দেশের সরকার যদি এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে এতে উভয় দেশের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
Leave a Reply